১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

বসন্ত ভালোবাসায় মোড়ানো দিন

গভীর আবেগ দিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন, ‘ধরারও ধূলিতে যে ফাগুন আসে/কই তাহার মত তুমি/আমার কাছে কভু আসো না তো!’ ধূলি-ধূসরিত এ ধরায় ফাগুন আসে প্রকৃতির নিয়মেই। বসন্তের আবাহনে মানবজীবনে আসে ভালোবাসাও। তাইতো বসন্ত ও ভালোবাসার সম্পর্ক চিরকালীন। মানবহৃদয় রাঙাতে এবার হাতে হাত ধরে এসেছে বসন্ত ও ভালোবাসা। এ যেন ফাগুন ও ভালোবাসার অপূর্ব যুগলবন্দি। প্রকৃতিতে আজ এক সুরে গেয়ে উঠবে বসন্ত ভালোবাসা। প্রস্ফুটিত হবে মন ও প্রকৃতি। উচ্ছ্বাসে পেখম মেলবে হৃদয়রাজ।

বঙ্গাব্দের ক্যালেন্ডার সংশোধনের কারণে আজ শুক্রবার একই দিনে পহেলা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। একে তো ছুটির দিন, অন্যদিকে দুটি বিশেষ উপলক্ষ। এ যেন একের ভেতর তিন! ঋতুরাজের প্রথম দিন, ভালোবাসা দিবস,

তাদের সঙ্গে ছুটির দিন। উৎসবপ্রিয় বাঙালির ঘর ছেড়ে বের হতে আর কী লাগে? নিসর্গবিবর্জিত মানুষের বসনে, ভূষণে আজ লাগবে বসন্তের ছোঁয়া। ভালোবাসার পরশে ঢেউ উঠবে হৃদয়সমুদ্রেও। বাঙালির জীবনে আজ তাই অন্য রকম উৎসবের দিন।

প্রকৃতিতে বসন্তের প্রকৃত ছোঁয়া পাওয়া যায় গ্রামের প্রান্তরে। নগরজীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া কিছুটা দুর্লভ। তবু আজ প্রকৃতির টানে, ভালোবাসার গানে মানুষ ঘর ছেড়ে বের হবে। রাজধানীবাসীর অনেকেই সকালে বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়ে, দুপুরে টিএসসিতে আড্ডা আর বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নতুন আসা বই কিনে কাটিয়ে দেবে বিশেষ দিন।

ষড়ঋতুর দেশে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিতেই মূলত বসন্ত জানান দেয় তার আগমনী বারতা। গ্রামের মেঠোপথ, নদীর পার, বৃক্ষরাজি, মাঠভরা ফসলের ক্ষেত বসন্তের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। চোখ বুজলেও টের পাওয়া যায় তার দৃশ্যপট। গ্রীষ্মের খরতাপের আগে ফাগুনে প্রকৃতি পায় শেষ পরিতৃপ্তি। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনে দোলা লাগে, হৃদয় উচাটন হয়।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদ্যাপন পরিষদ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় থাকবে যন্ত্রসংগীত, বসন্ত কথন পর্ব, প্রীতিবন্ধনী, আবির বিনিময়, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, একক সংগীত, দলীয় সংগীত এবং দলীয় নৃত্য। দেশের অগ্রগণ্য দল ও বরেণ্য শিল্পীরা অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেবেন।

বসন্তের ঝিরিঝিরি বাতাসে আজ হারিয়ে যাবে প্রেমিকযুগলও। সব আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসার গভীরতা। মানব-মানবীর চিরকালের যে প্রেম তার জয়গান হবে চারদিকে। আজকের এই রাঙা সকাল, বিকাল বা সন্ধ্যাটা একসঙ্গে কাটিয়ে প্রেমিকযুগল গাইবে ভালোবাসার গান। অনেকের জন্য যেমন আজকের কোনো একটা সময় হবে ভালোবাসার প্রথম প্রহর, তেমনিভাবে অনেকে উদ্যাপন করবে একসঙ্গে পথচলার কয়েক বছর।

আজকের দিনে সব কিছুতেই প্রাধান্য পাবে ভালোবাসার মানুষটির পছন্দ। তাই প্রিয় মানুষটি প্রিয় রং বা প্রিয় পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে উপস্থিত হবে আরেকবার। তবে ভালোবাসার রং লাল বলে বেশির ভাগ যুগলই নিজেদের সাজাবে লালে। নতুন করে একে অপরের প্রেমে পড়বে। নিজেদের মতো করে কাটিয়ে দেবে সারাটি দিন।

আজ ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকযুগলের পদচারণে মুখর থাকবে শহরের নানা পথ-প্রান্তর। দুজনে দুজনার হাত ধরে ঘুরবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। কারণ আজ নিজেদের মতো করে হারিয়ে যাওয়ার দিন। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ছবি-সেলফি তোলা চলবে। অনেক যুগল রিকশায় ঘুরবে। অনেকে আবার বিভিন্ন উদ্যানে-পার্কে গাছের ছায়ায় বসে মন খুলে কথা বলবে।

রাজধানীতে চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মেতে থাকবে ভালোবাসার উৎসবে। টিএসসি, শাহবাগ, চারুকলা, ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরও থাকবে যুগলদের পদচারণে মুখর।

অনেকে আবার ধানমণ্ডি, বনানী, গুলশান, উত্তরার ফাস্ট ফুড ও কফি শপগুলোতে জড়ো হবে। রাজধানীর শপিং মলের ফুডকোর্ট, যেমন—বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কে চলবে খাওয়াদাওয়া। অনেকে আবার একসঙ্গে সিনেমা দেখবে।

উল্লেখ্য, এত দিন ১৩ ফেব্রুয়ারিই ছিল ফাগুন মাসের প্রথম দিন আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালন করা হতো ভালোবাসা দিবস। তবে এখন থেকে দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে পড়বে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের মতো ঐতিহাসিক দিবসগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে ১ ফাল্গুনও বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীও বিবেচনায় আনা হয়েছে। ফলে এবার দুটি বিশেষ দিন একই সঙ্গে পালিত হবে।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ